ভালোবাসা নয় কোনো অপরাধ। তাই মন বিনিময়ে এক অপরের ওপর আস্থা রাখেন ভালোবাসা নামের পবিত্র ছোয়ায়। প্রায় ৩ বছর আগে এমনই  ভালোবাসায় জড়িয়ে ছিলেন স্বপ্ন দেখা দুইটি পাখি। মন বিনিময়ের মাধ্যমে ভালোবাসার সূচনা করেন দুজন। ভালোবাসার এক পর্যায়ে যখন পরিবারের সবাই জানতে পারেন তখন দুই পরিবারের মতাম মিলে যাওয়ায় দুই পাখিকে এক করতে দিন ধার্য করা হয়। এমরান আর প্রিয়তমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে এই ভালোবাসা দিবসেই তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ভাগ্যের লিখন এই পবিত্র ভালোবাসা বেশিদিন আর হলো না। মাত্র একদিন এই ভালোবাসা প্রিয়তমার সাথে টিকলো। এমরানেই প্রিয়তমাকে হতে হলো বিধবা। একটি দুর্ঘটনা এমরানের জীবন কেড়ে নিলো। বিয়ের পরের দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিলো এমরান।

বিয়ের পরের দিন সকল আত্মীয় ও প্রিয়জনদের উপস্থিতিতে শনিবার আয়োজন হচ্ছিলো প্রীতিভোজের। প্রীতিভোজে সকল আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আর এমন সময় বাবুর্চি জানাই,গরুর মাংস কম আছে এবং আরও প্রয়োজন। সেই মুহূর্তে এমরান দিশেহারা হয়ে ছুটে চলেন পাশের একটি বাজারে। আর সেখানে মাংস না পেয়ে আবার মোটরসাইকেলে ছুটে চলেন চান্দিনা বাজারের উদ্দেশ্যে ।

কিন্তু এমরান মোটরসাইকেল নিয়ে চান্দিনা-বদরপুর সড়কের বাড়েরা নামক এলাকায় পৌঁছামাত্র অন্য দিক থেকে আসা একটি সিমেন্টবাহী ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সাথে সাথে মারাত্মক আহত হয়ে মাটিতে লুটে পরে এমরান। স্থানীয় লোকজন তাকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যান চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। খুব মারাত্মক অবস্থা হওয়ায় চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা হাসপাতালে পাঠান। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইমরানকে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন। আর নেমে আসে শোকের ছায়া।

এমরান ছিলেন চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল উত্তরপাড়া গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। এমরানের আট ভাই -বোন। ৫ ভাই এবং  ৩ বোনের মধ্যে একদম সবার  ছোট ছিল এমরান।

না ফেরার দেশে চলে যাওয়া  এমরানের বড় ভাই জুয়েল বলেন , আমার ভাই এমরান আমাদের একই গ্রামের একটি মেয়ে শিউলীকে ভালোবাসে।  কিন্তু তাদের দুজনের ভালোবাসা দেখে এই ভালোবাসার দিবসেই ১৪ই ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) আমরা বিয়ে দেই। তবে এমন ভাই হারানোর শোক এভাবে সইতে হবে তা কখনো ভাবতে পারি নাই।

এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল ফয়সল বিষয়টি নিশ্চিত করে আমাদের জানান, ইমরানের পরিবারকে আমরা বলেছি অভিযোগ দিতে। ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হলেও  চালক পলাতক রয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন