দুজন ডাক্তার,

একটি মোটরসাইকেল,

৩০ দিনে ৪০০০ কি.মি. অতিক্রমের নেশা

আর উদ্দেশ্যটা?

না, তাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই।
পথ যতদিন শেষ হবে না, ততদিন নীল দিগন্তের সাথে মোটরসাইকেলে করে ছুটে চলবে তাদের ইচ্ছেগুলো।

কেবলই জীবন নামক শব্দটাকে যথার্থতা দিতেই এদের পথচলা। কিন্তু এতই কি সহজ জীবনটাকে নিজের পরিকল্পনামাফিক চালানো?

পথ কি এতই মসৃণ হয় চলার পথে? যদি এমনটাই তো তাহলে তো সবাই নিজের প্রয়োজনের থলিটা নিয়ে বের হয়ে পড়তো বিশ্ব ভ্রমণে।

হ্যাঁ, তাদের গন্তব্যও অতটা মসৃণ ছিল না। এক মোটরসাইকেলে দুজনের যাত্রায় আসতে থাকে একের পর এক বিপত্তি। তবুও কেন জানি এরা থামছিল না। একবারও বলছিলো না, থাক এই অ্যাডভেঞ্চারের এখানেই সমাপ্তি ঘোষণা করে দেই। বারবার বাইকে ঝামেলা, খাবারের সমস্যা, শারীরিকভাবে ভেঙে পড়া, লোকাল সমস্যায় জড়ানো ইত্যাদি ছিল তাদের প্রতিদিনকার রুটিনে।

তবুও দুজন পথের দিকেই চেয়ে ছিল। কারণ রাস্তা এখনো যে শেষ হয়নি, হয়নি দৈনিক নিত্যনতুন মানুষের সাথে মেলামেশা। শেষ হয়নি সেই অপরিচিত মুখগুলোর পরিচিত কষ্টের সাথে তাদের পরিচয়। কেন জানি, সবাই সবার থেকে ভিন্ন হওয়া স্বত্বেও অনুভূতিগুলো অভিন্ন থেকে যাচ্ছিল। সবাই নিজের গল্পগুলো কি সুন্দর করে তাদের কাছে ব্যক্ত করছে। কখনো দেখাচ্ছে ভালোবাসা, আবার কখনো ব্যাপক রাগ - অভিমান যেন মাথায় ফাটিয়ে ছাড়বে বুঝি। এমন সব অভিজ্ঞতাই যেন এই দুই ডাক্তার সাহেবদের পথ চলতে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছিল।

কিন্তু কেন জানি উদ্দেশ্যটা জাতসই হচ্ছিল না। একবার যাত্রাপথে এক দম্পতির সাথে দেখা। তারা সর্বস্ব হারিয়ে এখন অজানা ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কারণ, তারা ছিল কম্যুনিস্ট। তখন স্বামীস্ত্রী জিজ্ঞেস করে, আপনারা কোথায় যাচ্ছেন আর কেন?
দুজনের মুখে একই উত্তর, এভাবেই কেবল ভ্রমণ করার জন্যেই। মুখে বললেও তাদের মস্তিষ্ক হয়তো তাদের নিজেদের উত্তরই গ্রহণ করেনি।

ভাবতে লাগলো, মানুষগুলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কি সোচ্চার হলো আর তাদের জীবনটাই ছিন্নবিচ্ছিন্ন যাচ্ছে। এ থেকেই নিজেদের মহান পেশা চিকিৎসাকেই বেছে নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে চলে গেল। ধর্ম,বর্ণের উপরে গিয়ে মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করাকেই আদর্শ বানিয়ে ফেলে তারা।

কিন্তু, দুজনের মধ্যে একজন সবসময়ই নিজের আদর্শ ও সততায় বলিয়ান থাকতো। আর তার এই গুণাবলিগুলোই একদিন তাকে করে ফেলে পৃথিবীর অন্যতম বিপ্লবী। আমাদের রাস্তাঘাটে হরহামেশাই তার নাম ও মুখমণ্ডল বেষ্টিত টিশার্ট পড়া মানুষ দেখা যায়। তিনি আর কেউ নন, আর্নেস্ট চে গুয়েভারা। তার জীবনী নিয়েই নির্মিত এই সিনেমা। 'অসাধারণ' ছাড়া আর কিছু মনে করতে পারিনি মুভিটি দেখার সময়। শুধুই কি দেখেছি, এমন অনেককিছুই আছে যা শেখা ও জানার মতো। এই মুভি নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে দেখলে মস্তবড় ভুলটাই করবেন। রাজনৈতিক চিন্তাধারার উপরে গিয়ে যদি শুধুমাত্র চে গুয়েভারার দৃষ্টিকোণে দেখার চেষ্টা করেন তাহলে তার আদর্শ এবং নৈতিকতার পরিষ্কার ধারণা অর্জন করতে পারবেন বলে আশা করি।
কারোর মতামত কিংবা দ্বিমত স্বেচ্ছায় কমেন্টে পেশ করতে পারেন। হয়তো আপনার কমেন্টে আগ্রহী হয়ে কেউ মুভিটি দেখতেও আগ্রহী হতে পারে। 😊

🎬 The Motorcycle Diaries (2004)

WATCH GOOD FILMS 💜
#PDREVIEWS

লিখেছেনঃ Pranto Debnath
সূত্র: মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন